জঙ্গি মুসা আওয়ামীলীগ সেক্রেটারির মেয়ের জামাই!

মুসার মা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘‘আড়াই বছর আগে সে বাসুপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঁইপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে তৃষ্ণামনিকে বিয়েও করে। বিয়ের পর সে স্ত্রী নিয়ে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৬ তলা ওই বাড়িতে থাকতো। আর এখানেই থাকতো নব্য জেএমবির আরেক নেতা সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদ।
সিলেট মহানগরের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে শুক্রবার (২৪ মার্চ)  ভোর থেকে ‘আতিয়া মহল’ ঘিরে ফেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। সেনাবাহিনীর কমান্ডো দলের পরিচালনায় চলছে ‘টোয়াইলাইট অভিযানে’। এ অভিযানে সেনাবাহিনীকে সাহায্য করছে র‌্যাব, পুলিশ ও সোয়তের সদস্যরা। পুলিশের ধারণা ঐ মহলে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মুসা ও নারী জঙ্গি মর্জিনা বেগম রয়েছে।
২০০৪ সাল থেকেই জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে বর্তমানে নব্য জেএমবির অন্যতম শীর্ষ নেতা মঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা। মুসার পিতার নাম আবুল কালাম মোল্লা। তিনি স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জিন ছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন। মুসার মায়ের নাম সুফিয়া বেগম। গ্রামের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের বজ্রকোলা।
স্থানীয়রা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৪-০৫ সেশনে মুসা বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিল। ২০০৪ সালের এপ্রিল থেকে বাংলা ভাইয়ের নেতৃত্বে রাজশাহী অঞ্চল তথা বাগমারা, নওগাঁর আত্রাই, রাণীনগর, নাটোরের নলডাঙ্গায় অভিযান শুরু করলে মুসা জেএমবিতে যোগদান করে। ওই সময় বাংলাভাইয়ের সহযোগী হওয়ার সুবাদে এলাকায় দাপট দেখাতো এবং লোকজনকে জেএমবিতে যোগদানের উৎসাহ দিতো। যারা তার বিরোধীতা করতো তাদের ধরে এনে নির্যাতন করাও ছিল তার কাজ। পরবর্তীতে বাংলাভাই আত্মগোপনে চলে যাওয়ার পর মুসাও কিছুদিন আত্মগোপনে ছিল। এরপর সে আবার এলাকায় ফিরে আসে। এইচএসসি পাশ করার পর সে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়। পরে সেখান থেকে রেফার্ড নিয়ে ঢাকা কলেজে চলে আসে। এরপর সেখান থেকে পাশ করার পর উত্তরার লাইফ স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করে।
মুসার গ্রামের বাসিন্দা মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘বাংলাভাইয়ের আমলেও মঈনুল জেএমবির সঙ্গে জড়িত ছিল। সে সময় তার সঙ্গে বাড়িতে কিছু অপরিচিত লোকজন আসতো। তবে যারা আসতো দু’তিনদিন থাকলেও তারা বাড়ির বাহিরে বের হতো না। তাই কিছু বুঝা যেত না।’
মুসার মা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘‘আড়াই বছর আগে সে বাসুপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঁইপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ে তৃষ্ণামনিকে বিয়েও করে। বিয়ের পর সে স্ত্রী নিয়ে উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরের ৬ তলা ওই বাড়িতে থাকতো। আর এখানেই থাকতো নব্য জেএমবির আরেক নেতা সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত মেজর জাহিদ। যিনি আজিমপুরের অভিযানে আত্মহত্যা করেন। গত ৮ মাস আগে সে তার নিজ বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গণিপুর ইউনিয়নের বজ্রকোলা গ্রামে এসেছিল। ওই সময় সৌদি আরব যাবে বলে ৩ লাখ টাকার জমি বিক্রি করে বাড়ি থেকে চলে যায়। এরপর সে আর বাড়ির সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেনি। তবে মুসা সর্বশেষ গ্রামে এসে যাওয়ার সময় বাড়িতে থাকা তার ছবিসহ বেশ কিছু কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলে যায়।’’
মুসার মা আরো জানান, মুসা উত্তরার যে বাসাতে থাকতো সেখানে আমি বেশ কয়েকবার গিয়েছি। মুসার সঙ্গে মেজর জাহিদের ঘনিষ্ঠতা বেশি ছিল। মাঝে মধ্যে কিছু লোকজনও আসতো সেই বাড়িতে। ওই ভবনের ছাদে তারা মিটিংও করতো। কিন্তু তখন বুঝতে পারিনি যে এটি কিসের মিটিং। টেলিভিশনে দেখে আমি যখন জানতে পারি আমার ছেলে জঙ্গি তখন বুঝতে পারছি আসলেই তারা জঙ্গির মিটিং করতো।
মুসার স্ত্রী তৃষ্ণামনির পিতা আব্দুস সামাদ বলেন, মঈনুল বলেন আর মুসাই বলেন সে এখন দেশের শত্রু। জাতির শত্রু। আমি তাকে আর জামাই হিসেবে পরিচয় দিতে চাইনা। তবে আমার মেয়ে যদি অপরাধী হয় তবে প্রচলিত আইনে যে শাস্তি হবে আমি মেনে নেব।’
তিনি আরো জানান, ‘৮ মাস থেকে আমার মেয়ের সঙ্গে কোন যোগাযোগ ছিলনা। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৩ টার দিকে অপরিচিত এক নম্বর থেকে আমার মোবাইল ফোনে মিসড কল আসে। পরে আমি ওই নম্বরে ফোন করি। তখন আমার মেয়ে বলে বাবা আমি। আমার মেয়ে জানায় আমার বিপদ, পুলিশ আমাদের বাসা ঘিরে ফেলেছে। তখন আমি তাকে বলি তুমি পুলিশের কাছে যাও। এরপর আর কোন কথা হয়নি।’
উল্লেখ্য, ঢাকা-চট্টগ্রামের জঙ্গি অভিযানের পর আটককৃত বিভিন্ন জঙ্গিদের দেওয়া তথ্যমতে ঢাকা থেকে আসা কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের সদস্যরা ওই বাড়িতে থাকা জঙ্গিদের সন্ধান পান।
কে এই মুসা? মাদরাসা ছাত্র?
সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহল এখন সারা দুনিয়ার মানুষ চেনে। এখানে নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা মঈনুল ইসলাম ওরফে মুসা ও নারী জঙ্গি মর্জিনা রয়েছে। তাদের ধরতে র‌্যাব, পুলিশ, সোয়তের পাশাপাশি সেনাবাহিনীও অভিযানে অংশ নিয়েছে। কিন্তু জঙ্গিদের এতো শক্তি রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন কুলিয়ে উঠতে পারছে না। তাদের এ শক্তির উৎস কোথায় জনমনে আজ দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
কে ঐ মুসা?
সে কি মাদরাসার ছাত্র?
মাদরাসার শিক্ষক?
হেফাজতি কোন হুজুরের জামাই?

সরকার, প্রসাশন ও চেতনা ব্যবসায়ীদের ভেতর থেকে যখন ‘কওমী মাদরাসা’ জঙ্গিদের ‘ব্রিডিং গ্রাউন্ড’ (আঁতুড় ঘর) বলা হচ্ছে। ‘কওমী মাদরাসাগুলোতে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকভাবে জঙ্গিবাদের ধারণা দেয়া হয়’ বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তখনই ‘মুসা’ চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো এসব সম্পুর্ণ মিথ্যা। এসব অপপ্রচার। মাদরাসা শিক্ষার সাথে জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদের নুন্যতম সম্পর্ক নেই।
সরকার, প্রশাসন ও চেতনা ব্যবসায়ীরা অবাক না হলেও আপনি শুনে অবাক হয়ে যাবেন।

জেএমবি’র দুর্ধর্ষ জঙ্গি ‘মুসা’ কোন মাদরাসার ছাত্র ছিল না। কোন মাদরাসার শিক্ষকও না। বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করার পর সে রাজশাহী কলেজে ভর্তি হয়। পরে সেখান থেকে রেফার্ড নিয়ে ঢাকা কলেজে চলে আসে। এরপর সেখান থেকে পাশ করার পর উত্তরার লাইফ স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করে।
এরপরও শেষ নয় …

‘মুসা’ বাগমারার বাসুপাড়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঁইপাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদের মেয়ের জামাইও।
ইতিমধ্যে যতো জঙ্গি ধরা পড়েছে সবাই কলেজ ইউনিভার্সিটির ছাত্র। কোন না কোনভাবে আওয়ামীলীগ পরিবারের সন্তান। আজকের দুর্ধর্ষ জঙ্গি ‘মুসা’ও তাদের উত্তরসূরি বলে প্রমাণিত হলো।

যারা কওমী মাদরাসাকে জঙ্গিবাদ সৃষ্টির কারখানা বলে চিল্লায় তাদের বিবেক সুস্থ হোক। দেশ ও জাতির স্বার্থে শুভবুদ্ধির উদয় হোক। জঙ্গিবাদ নিপাত যাক। মানবতা মুক্তি পাক।
সূত্রঃ- আমার দেশ 

0 comments Blogger 0 Facebook

Post a Comment

Thanks for see

 
আমাদের সকল চেষ্টা মানবতার কল্যাণে © 2013. All Rights Reserved. Powered by Blogger
Top