#তারাবীহ_নামায_বিশ_রাকাতঃ_
একটি_দলীলভিত্তিক_পর্যালোচনা ভূমিকা রাসূল সা., সাহাবায়ে কেরাম রা., তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীগণ এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত যে, তারাবী নামায বিশ রাকাত। কিন্তু ১২৮৪ হিজরীতে ভারতের আকবরাবাদ থেকে সর্বপ্রথম এক লা-মাযহাবী মৌলভী সাহেব আট রাকাত তারাবীর ফাতওয়া প্রদান করেন। এরপর ১২৮৫ হিজরীতে পাঞ্জাব সীমান্তে মাওলানা মুহাম্মদ হুসাইন বাটালবী আট রাকাত তারাবী নামায পড়া সুন্নত হওয়ার দাবি করেন। কিন্তু কুরআন ও হাদীস সম্পর্কে তৎকালীন প্রাজ্ঞ হক্কানী উলামায়ে কেরাম উক্ত আট রাকাত তারাবীর ফাতওয়াকে ভুল হিসেবে প্রমাণিত করে তা প্রত্যাখ্যান করেন।
১৩৭৭ হিজরীতে আরবে শায়েখ নসীব রেফায়ী ও শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রহ. সর্বপ্রথম আট রাকাত তারাবীর মত প্রকাশ করেন। তখন শায়েখ আতিয়্যা সালিমসহ আরবের জমহুর উলামায়ে কেরাম তাদের উক্ত রায়কে প্রত্যাখ্যান করেন এবং সাহাবায়ে কেরাম রা. এর যুগ থেকে চলে আসা হারামাইন শরীফাইন তথা বাইতুল্লাহ শরীফ ও মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত তারাবীর আমলকে অব্যহত রাখেন। যা আজো অব্যাহত রয়েছে। সুতরাং আট রাকাত তারাবী পড়ার মতকে অনুসরণের অর্থ হল, সাহাবা ও তাবেয়ীগণের অনুসৃত আমলকে প্রত্যাখ্যান করে নব্য সৃষ্ট বিদআতি দলের অনুসরণ করা। তারাবীহ নামায বিশ রাকাতের প্রমাণ
عن ابن عباس ان رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يصلى فى رمضان عشرين ركعة والوتر
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন।
{মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/২৯৪, হাদীস নং- ৭৬৯২, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ-২১৮, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১২১০২, মাজমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৭২, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯১}
  عن جابر بن عبد الله قال خرج النبى صلى الله عليه وسلم ذات ليلة فى رمضان فصلى الناس اربعة وعشرون ركعة واوتر بثلاثة
হযরত জাবের রাঃ বলেনঃ রমজান মাসের এক রাতে রাসূল সাঃ বাহিরে তাশরীফ নিয়ে এলেন। আর সাহাবায়ে কেরামকে ২৪ রাকাত [৪ রাকাত ঈশার, আর ২০ রাকাত তারাবীহের] নামায পড়ালেন। আর তিন রাকাত বিতির পড়ালেন।
[তারীখে জুরজান-২৭}
যেহেতু কথিত আহলে হাদীস ভাইদের কাছে দলীল শুধু কুরআন ও সহীহ হাদীস। তথা আল্লাহ ও রাসূল সাঃ এর কথা। কোন ব্যক্তির মতামত তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আর এ দুটি হাদীসকে আল্লাহ এবং রাসূল সাঃ না সহীহ বলেছেন, না জঈফ বলেছেন। তাই গায়রে মুকাল্লিদরা এ দুটি হাদীসকে না সহীহ বলতে পারবে, না জঈফ বলতে পারবে। এবার দেখার বিষয় হল, উম্মতের ঐক্যমত্বের আমল এর উপর আছে কি নেই? যদি দেখা যায় যে, উম্মতের আমল এর উপরই। তাহলে আমল হিসেবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার দ্বারা উক্ত হাদীস সহীহ হয়ে যায়।
ওমর রাঃ এর আদেশ
عن يحيى بن سعيد ان عمر بن الخطاب امر رجلا يصلى بهم عشرين ركعة
হযরত ইয়াহইয়া বিন সাঈদ থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় ওমর বিন খাত্তাব রাঃ এক ব্যক্তিকে বিশ রাকাত পড়ার হুকুম দিলেন। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা-২/২৯৩} হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামল
وروى مالك من طريق يزيد بن خصيفة عن السائب بن يزيد عشرين ركعة
হযরত সায়েব বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ এর সময়কালে বিশ রাকাত তারাবীহ ছিল। {ফাতহুল বারী-৪/৪৩৬}
 যার সনদ বুখারীতে দুই স্থানে আছে।
عن السائب بن يزيد ، قال : كنا نقوم في زمان عُمَر بن الخطاب رضي الله عنه بعشرين ركعة والوتر
হযরত সায়েব বিন ইয়াজিদ রাঃ বলেনঃ আমরা হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ ও বিতির পড়তাম। {সুনানে সুগরা লিল বায়হাকী, হাদীস নং-৮৩৩, মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩}
ইমাম নববী রহঃ, সুবকী রহঃ [শরহুল মিনহাজ], মোল্লা আলী কারী রহঃ [শরহুল মুয়াত্তা] ও সুয়ুতী রহঃ এ বর্ণনাকে সহীহ বলেছেন।
محمد بن كعب القرظى كان الناس يصلون فى زمان عمر بن الخطاب فى رمضان عشرين ركعة ويوترون بثلاث
মুহাম্মদ বিন কাব কুরজী বলেনঃ ওমর ফারুক রাঃ এর শাসনামলে লোকেরা রমজান মাসে বিশ রাকাত তারাবীহ ও তিন রাকাত বিতির পড়তো।
عن يزيد بن رومان ، أنه قال : « كان الناس يقومون في زمان عمر بن الخطاب في رمضان بثلاث وعشرين ركعة »
হযরত ইয়াজিদ বিন রূমান বলেনঃ লোকেরা হযরত ওমর রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহ এবং তিন রাকাত বিতির রমজান মাসে আদায় করতো। {মারিফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৪৪৩, মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৩৮০, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৪৩৯৪}
عن الحسن ان عمر بن الخطاب جمع الناس على ابى بن كعب فكان يصلى بهم عشرين ركعة
হযরত হাসান রাঃ থেকে বর্ণিত। হযরত ওমর রাঃ লোকদেরকে হযরত উবায় বিন কাব রাঃ এর কাছে একত্র করে দিলেন। আর তিনি লোকদের বিশ রাকাত তারাবীহ পড়াতেন। {সুনানে আবু দাউদ-১/২০২, সিয়ারু আলামিন নুবালা-১/৪০০}
عن ابى بن كعب ان عمر بن الخطاب امره ان يصلى باليل فى رمضان فصلى بهم عشرين ركعة
হযরত উবায় বিন কাব রাঃ বলেনঃ হযরত ওমর রাঃ আমাকে এই মর্মে আদেশ দিলেন যে, আমি যেন লোকদেরকে তারাবীহ পড়াই। তখন বিশ রাকাত পড়া হতো। {কানযুল উম্মাল-৮/২৬৪}
ইমাম বায়হাকী, আল্লামা বাজী, কাশতাল্লানী, ইবনে কুদামা, ইবনে হাজার মক্কী, তাহতাবী, ইবনে হুমাম, বাহরুর রায়েক প্রণেতা রহঃ প্রমুখগণ এ ব্যাপারে একমত হয়ে বলেনঃ হযরত ওমর ফরুক রাঃ এর শাসনামলে বিশ রাকাত তারাবীহের উপরই সকলের সিদ্ধান্ত স্থির হয়। এবং এভাবেই চলতে থাকে। ইংরেজ আমলের পূর্বে কোন একজন মুহাদ্দিস বা ফক্বীহ এটাকে অস্বিকার করেননি। আর সুন্নত হওয়ার জন্য সেটির নিরবচ্ছিন্ন হওয়া শর্ত। তাই এই বিশ রাকাত তারাবীহ সুন্নতে ফারূকী হয়েছে। এ সেই ওমর রাঃ, যার ব্যাপারে রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন যে, যদি আমার পর কোন নবী হতো তাহলে নবী হতো ওমর। তিনি আরো বলেছেনঃ দ্বীনের ব্যাপারে সবচেমজবুত হলেন ওমর রাঃ। যদি বিশ রাকাত তারাবীহ নামায বিদআত হয়, তাহলে হযরত ওমর রাঃ সহ সে সময়কার সমস্ত আনসার ও মুহাজির সাহাবীগণের বিদআতি হওয়ার আবশ্যক হয়। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ উবাই বিন কাব রাঃ তারাবীহ মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের মাঝে পড়াতেন। কোন একজনও এ ব্যাপারে আপত্তি উত্থাপন করেনি। {মাজমুআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া-৩৩/১১২}




0 comments Blogger 0 Facebook

Post a Comment

Thanks for see

 
আমাদের সকল চেষ্টা মানবতার কল্যাণে © 2013. All Rights Reserved. Powered by Blogger
Top